ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা
লেখক: সৈয়দ আবুল মকসুদ
ধরন: গবেষণামূলক প্রবন্ধ
প্রকাশনী: প্রথমা প্রকাশন
প্রথম প্রকাশ: ২০১৬
মুদ্রিত মূল্য: ৬৫০
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৪০৭
বাঙালি জাতির ইতিহাসের সাক্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ইতিহাস নয়; একটি জনপদের মানুষের আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উত্থানের ৫০ বছরের ইতিহাস। যে ভূখণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটি এর প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরের মধ্যে স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে।
তৎকালীন পূর্ববঙ্গে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করা সহজ কাজ ছিল না; অনেক বাধা-বিপত্তি এসেছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কলকাতার জমিদাররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিরোধিতা করেছেন কিনা, সেটা জানা যাবে বইটা পড়ার মাধ্যমে। বিরোধিতা করলে কেন বিরোধিতা করেছেন, সেটার অকাট্য যুক্তি ও প্রমাণ দেওয়া আছে বইটিতে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হবে একটি বিশ্বমানের উচ্চ শিক্ষার আদর্শ প্রতিষ্ঠান। আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে এবং বিভিন্ন প্রতিকূলতায় তাদের আশা শতভাগ পূরণ না হলেও কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে কুড়ি শতকের প্রথমার্ধে যতগুলো উন্নতমানের বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল সেগুলোর একটি। শিক্ষার মান, শিক্ষার পরিবেশ বিচারে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান ছিল যথেষ্ট উঁচুতে। বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা যেমন বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যায়, তখন বিদেশের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসত। যদিও ৫০ বছর পর এই প্রতিষ্ঠান তার মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে পারেনি। কেন এই অধঃপতন, সেটার একটা চিত্র দেওয়া আছে বইটিতে।
অনেক গবেষণা আর পরিশ্রম করে বইটি লিখেছেন সৈয়দ আবুল মকসুদ, পড়লেই বুঝা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর এই বইটি পড়া ফরজ বলে আমি মনে করি। পূর্বের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্থক্যটা সাদা চোখেই ধরা পড়বে তখন।
আপনি হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না, কিন্তু তাও বইটি আপনার পড়া উচিত। কোনো বইয়ের পাঠক শুধু একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা শ্রেণি হতে পারে না। আবুল মকসুদ সেই ধারণাটি মাথায় রেখেই বইটি লিখেছেন। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার দ্বার কীভাবে উন্মুক্ত হয়েছে, সেটা বোঝা যাবে এ বইটি পড়লে। বাংলাদেশ আজ বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে ভরে গেছে। কিছু সভা এবং স্বাক্ষরের মাধ্যমে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জানা প্রয়োজন কী প্রক্রিয়ায় দশটি বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে গোটা জাতির মেধাবী শ্রেষ্ঠ সন্তানদের যুক্ত করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়টি।
0 Comments